বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

মিত্তির বাড়ির রহস্য—(২ ও শেষ পর্ব )

"রোমাঞ্চকর গল্প " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X প্রথম অভিযান " মিত্তির বাড়ির রহস্য " ষষ্ঠীপদ ভট্টাচার্য ------------------- (২য় ও শেষ পর্ব) দুপুরবেলা মিত্তিরদের বাগানে সেই ভাঙা বাড়িতে গিয়ে জমায়েত হল সকলে। বাবলু, বিলু, ভোম্বল, বাচ্চুু, বিচ্ছু এবং পঞ্চু। কেউ বাদ গেল না। বিচ্ছু ধীরে ধীরে গতরাত্রের ঘটনাটা সবিস্তারে খুলে বলল। শুনে তো অবাক সকলে । বাবলু বলল, "আমি বিচ্ছুর এই দুর্দান্ত সাহসের প্রশংসা করি।" বিলু বলল, "কিন্তু এইরকমই যদি হয়ে থাকে তা হলে এর পরেও কি আমাদের এখানে ঘাটি গাড়াটা ঠিক হবে ?" ভোম্বল বলল, "আলবত হবে। এমন নিরিবিলি জায়গা আর কোথায় পাব বল? তা ছাড়া এই বাগানে যাতায়াত তো আমাদের একদিনের নয়।" বিলু বলল, "সে কথা ঠিক। কিন্তু কাল রাত্রে যা হয়ে গেল তার পরে-।" বাবলু বলল, "দেখ, ভীতু ছেলের মতো কথা বলিস না। পাণ্ডব গোয়েন্দারা ভীতু নয়। এইটাই প্রমাণ করতে হবে। আমাদের ঘাটি এখানেই থাকবে। এবং সময় পেলেই আমরা এখানে এসে জড়ো হব। যাক, যে জন্য আমরা, মানে আমাদের এই পাণ্ডব গোয়েন্দা তার উদবোধন আজই হবে। আজ থেকেই শুরু হবে আমাদের কাজ। আজ রাত বারোটার সময় সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়বে তখন আমাদের বাড়ির লাইটপোস্টের নীচে এসে দাঁড়াবি তোরা। সেখান থেকেই দলবেঁধে আমরা এখানে আসব। তবে পঞ্চুকে এবারে আমাদের সঙ্গে নেব না। কেন না যদি ভৌতিক ব্যাপার হয়, তা হলে কুকুরে ভূত চেনে। ও ব্যাটা চেঁচিয়েই সব মাটি করে দেবে। " বিলু বলল, "কিন্তু আমার মনে হয় পঞ্চুু আমাদের সঙ্গে থাকলে ভালই হত।" বাবলু বলল, "না।" সেই না শুনে পঞ্চু অমনি মুখ উঁচিয়ে প্রতিবাদ করে উঠল, "ভৌ ভোঁ।" বাবলু বলল, "না পঞ্চু। আমাদের আজকের এই অভিযানে তোমাকে আমরা সঙ্গে নিতে পারব না।" বিলু, ভোম্বল, বাচ্চু, বিচ্ছু সবাই তখন বাবলুকেই সমর্থন করল। একেবারে পুরোপুরিভাবে ঠিক হয়ে গেল যে পঞ্চু ওদের সঙ্গে যাচ্ছে না। রাত তখন বারোটা। বিলু, ভোম্বল, বাচ্চুু, বিচ্ছু ঠিক সময়েই বাবলুদের বাড়ির সামনে লাইটপোস্টের নীচে এসে দাঁড়াল। এসে দেখল ওরা আসবার আগেই বাবলু এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তারপর যেই ওরা জড়ো হল অমনি সবাই মিলে চলল মিত্তিরদের বাগানের দিকে। যথাসময়ে বাগানের সেই ভাঙা বাড়ির মধ্যে গিয়ে ঢুকল সকলে। আজ আর এখানে আসতে অন্ধকারেও কোনও অসুবিধে হল না। কেন না বাবলুর হাতে টর্চ ছিল। না হলে যা অন্ধকার তাতে পাশের লোককেই দেখা যায় না। বাবলু বলল, "আজ রাত্রেই এই বাড়ির সমস্ত ঘর আমরা ঘুরে দেখব। ভাগ্য ভাল থাকলে কালকের রহস্যের আজই উদ্ঘাটন হবে।" বিলু বলল, "দেখাই যাক। চোর-ডাকাত কি ভূত। যদি ভূত হয় তা হলে আমরা এতজন যখন আছি তখন ভূত নিশ্চয়ই আমাদের কাছে আসবে না।" ভোম্বল বলল, "সঙ্গে একটা আঁশ-বঁটি রাখলে ভাল হত।" visit for more: www.shishukishor.org বাবলু বলল, "আঁশ-বটি কী হবে? আঁশ বঁটি দেখে ভূত পালাবে? বোকা কোথাকার। এত ভয় কেন? এটা বিজ্ঞানের যুগ। এ যুগে ভূত বলে কিছু আছে নাকি? আর ভূত যদি থাকেও তা হলে ভূতের সঙ্গে খালি হাতেই লড়ব আমরা।" ভোম্বল বলল, "আমি অবশ্য আসবার সময় সঙ্গে একটা গুলতি আর কিছু পোড়া মাটির গুলিও নিয়ে এসেছি। দরকার হলেই কাজে লাগাব।" বাবলু উৎসাহিত হয়ে বলল, "খুব ভাল করেছিস। অনেক কাজে লাগবে ওটা। দে গুলতিটা আমার হাতে দে।" ভোম্বল গুলতিটা বাবলুর হাতে দিল। এমন সময় হঠাৎ হিসস" শব্দ করে সবাইকে চুপ করতে বলল বাবলু। কী হল? হল কী? সবাই কান খাড়া করে শুনতে লাগল সেটা। কেমন যেমন রোমাঞ্চকর মনে হল। বিচ্ছু এসে বাচ্চুুর গায়ের কাছে ঘন হয়ে দাঁড়াল। সবাই শুনল ছাদের ওপর কেমন যেন একটা খস খস আওয়াজ হচ্ছে। কী ভয়ংকর! এই ঘন অন্ধকারে নিকষ কালোয় এই ভাঙা বাড়িটা তখন সত্যই প্রেতপুরী বলে মনে হল। মুঠো মুঠো জোনাকি চারদিকে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে উড়ে বেড়াচ্ছে। সেই মিটি মিটি জোনাকির আলোয় মনে হল এই পরিবেশটাই এক সাংঘাতিক রকমের বিভীষিকাময়। বাইরে চাপা গাছের ডালে একটা প্যাঁচা ডাকল-শ্যাঁ-স্-স। ওরা টর্চের আলো নিভিয়ে দিয়েছে তখন। প্রত্যেকেই স্থাণুর মতো দাড়িয়ে আছে। দেয়াল ঘেঁষে নীরবে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল ওরা। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর এক সময় খুব সাবধানে অত্যন্ত চাপা গলায় বাবলু বলল, "সবাই আমার পিছু পিছু আয়।" তারপর গুলতিটা একটু টেনে টেনে দেখে হাতে দিয়ে বাবলু বলল, "এগুলো তোর কাছে রাখ বিলু! তোর হাতের অব্যর্থ টিপ। যদি দেখিস আমাদের মুখের ওপর কোনও আলো এসে পড়ছে তা হলে সঙ্গে সঙ্গে সেই আলো লক্ষ্য করে গুলতিটা টিপ করবি।" বিলু আচ্ছা বলে গুলি ও গুলতি নিয়ে নিল। তারপর সবাই মিলে এগিয়ে চলল বাবলুর পিছু পিছু। ওরা এ-ঘর সে-ঘর করে দোতলায় উঠে এল। দোতলার বারান্দা পার হয়ে একটা ঘরের কাছে যেতেই দেখল ঘরের ভেতর থেকে মৃদু একটু আলোর রেখা খুব অস্পষ্টভাবে বাইরে ভেসে আসছে। ওরা একবার থমকে দাড়াল। তারপর খুব সন্তৰ্পণে ঘরের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখল একজন ভদ্রলোক হাত পা বাঁধা অবস্থায় ঘরের মেঝেয় পড়ে আছেন। আর দুটো কঙ্কাল দু"পাশে দাঁড়িয়ে আছে ধারালো দুটো ছোরা হাতে নিয়ে। কী ভয়ংকর সেই দৃশ্য! একজন ছোরা উঁচিয়ে বলছে, "এখনও কিন্তু সময় আছে। যদি ভাল চান তো শিগগির এই কাগজটাতে লিখে দিন আমরা গেলেই যেন আপনার স্ত্রী আমাদের হাতে বিশ হাজার টাকা তুলে দেন। যদি না লেখেন তা হলে আজ রাত্রেই আপনাকে খুন করে আমরা এই বাগানে চাপা গাছের গোড়ায় পুঁতে ফেলব। আপনার মতো আরও অনেককেই সরিয়ে দিয়েছি আমরা। অতএব যা বলি তা চটপট করে ফেলুন।" ভদ্রলোক কঠিন গলায় বললেন, "ও টাকা আমার মেয়ের বিয়ের জন্য সবে কাল তুলেছি। আমার এখনও পাঁচ হাজার টাকার দরকার। আমি কী করে ও টাকা তোমাদের দেব?" "আপনাকে দিতেই হবে।" "অসম্ভব। ও আমি দিতে পারব না।" "চিঠি তা হলে লিখবেন না আপনি?" "না। আমার মেয়ের বিয়ে আমার বাড়ির লোকরাই দিয়ে দেবে। তোমাদের যা ইচ্ছা তা করতে পার।" এই না দেখেই তো পাণ্ডব গোয়েন্দাদের চক্ষু গেল স্থির হয়ে। এ আবার কী আশ্চর্য ব্যাপার। কঙ্কাল যে মানুষের মতো কথা বলে তা ওদের ধারণাতেই ছিল না। কঙ্কাল কঙ্কালই। কঙ্কাল মানেই তো ভূত। আর তাই যদি হয় মানে ভূতই যদি হয়, তবে ভূতে কেন খামোক টাকা চাইতে যাবে? এ শুধু আশ্চর্য নয়, দারুণ এক রহস্যময় ব্যাপার। বিলু বলল, "কী করবি রে বাবলু? কেটে পড় শিগগির। হাওয়া খারাপ।" বিলু বলল, "তাই তো মনে হচ্ছে।" এদের কথা শুনে বাবলু একটু রেগে বলল, "আচ্ছা ইডিয়ট তো! চুপ কর না।" যেই না বলা সঙ্গে সঙ্গে কঙ্কালদুটো ঘুরে তাকাল। তারপর চট করে বাতিটা নিভিয়েই টর্চের এক ঝাক তীব্র আলো ওদের মুখের ওপর নিক্ষেপ করে বলল, "কে! কে ওখানে?" ধরা পড়ে গিয়ে বাবলুদের তখন দারুণ সাহস বেড়ে গেছে। আবার জেদও চেপে গেছে খুব। ওরা তাই সমস্বরে বলে উঠল, "পাণ্ডব গোয়েন্দা।" বিলু রেডি হয়েই ছিল। সঙ্গে সঙ্গে সে একটু আড়াল হয়ে টর্চের মুখ লক্ষ্য করে গুলতি টিপ করল। একেবারে অব্যর্থ টিপ। লাগল গিয়ে ঠিক টর্চের আলোর মুখেই লাগা মাত্রই ফট করে ভেঙে গেল কাঁচটা। সে আলোও নিভে গেল তখনই। ওদের আলো যেই না নিভল অমনি জ্বলে উঠল বাবলুর টর্চ। একটা কঙ্কাল ভয়ে চেঁচিয়ে উঠল, "ভূ-ভূ-ভু। এ নিশ্চয়ই ভুতুড়ে ব্যাপার।" হাতের কাছে একটা আধলা ইট পড়েছিল। ভোম্বল করল কী চট করে সেই ইটটা কুড়িয়ে নিয়ে ছুড়ে মারল কঙ্কালটার মুখে। ওতেই যথেষ্ট। ইটের ঘা খাওয়া মাত্রই মাথা ঘুরে পড়ে গেল বাছাধন। সেই না দেখে অপর কঙ্কালটা ভয়ে বিস্ময়ে চমকে উঠে বলল, "মাই গড়।" বলেই এক লাফে পাশের ভাঙা জানলাটা দিয়ে হাওয়া। তারপর দুড়-দাড় করে ওপরের সিঁড়ি বেয়ে দে দৌড়। বাবলু, বিলু, ভোম্বল, বাচ্চুু, বিচ্ছুও কঙ্কালটার দৌড়ের বহর দেখে অবাক হয়ে গেল। এমন সময় ছাদের ওপর থেকে পঞ্চুর গলা শোনা গেল, "ভৌ ভৌ ভৌ। ভৌ-উ-উ।" বাবলু অবাক হয়ে বলল, "পঞ্চুর গলা না? পঞ্চু কোথেকে এল! ওকে তো আনিনি আমরা।" বিচ্ছু বলল, "ও নিশ্চয়ই লুকিয়ে আমাদের পিছু পিছুপালিয়ে এসেছে। উঃ! কী দুষ্ট। যাক, ভালই হয়েছে।" বাবলু জোরে চেঁচিয়ে ডাকল, "আয় আয়। পঞ্চু আয়। আমরা এখানে আছি।" কিন্তু কোথায় পঞ্চুু! ওরা বারান্দার কাছে এগিয়ে এসে দেখল পঞ্চু তখন পলায়মান সেই কঙ্কালটাকে ধরবার জন্য তীরের মতো ছুটছে। বাবলু বলল, "যাক। পঞ্চু যখন গেছে তখন আর আমাদের ওদিকে মাথা ঘামাবার দরকার নেই। এখন ঘরের ভেতরে ঢুকে দেখা যাক ব্যাপারখানা কী।" ওরা সকলে ঘরের ভেতর ঢুকল। তারপর টর্চ জ্বেলে সেই অচৈতন্য কঙ্কালটার কাছে এগিয়ে গেল ওরা। বিলু আর ভোম্বল হাত-পা বাধা ভদ্রলোকের বাঁধন খোলার কাজে লেগে গেল। ভদ্রলোক মুক্তি পেতেই তাড়াতাড়ি পকেট থেকে দেশলাই বার করে জ্বেলে ফেললেন বাতিটাকে। বাতির আলোয় ঘরটা আলোকিত হয়ে উঠতেই ওরা দেখল, এতক্ষণ দূর থেকে যাকে ওরা কঙ্কাল বলে ভুল করেছিল আসলে সে কঙ্কালই নয়। কঙ্কালের পোশাক-পরা মানুষ মাত্র। তার কালো পোশাকের ওপর সাদা সাদা ডোরা এমন ভাবে আঁকা যে তাকে আচমকা দেখলে সত্যিকারের কঙ্কাল বলেই মনে হবে। মানুষটা তখনও অজ্ঞান হয়েই ছিল। ওরা সেই অবস্থাতেই বেশ শক্ত করে বেঁধে ফেলল তাকে। এদিকে সেই ভদ্রলোক তো মুক্তির আনন্দে গদ গদ হয়ে বাবলুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, "কে বাবা তোমরা? বিপদে আমার প্রাণ বাঁচালে। ঠিক সময়টিতে তোমরা এসে না পড়লে ওরা আমাকে নির্ঘাত মেরে ফেলত।" বাবলু বলল, "আমাদের পরিচয় পরে পাবেন। এখন আপনি এক কাজ করুন। শিগগির গিয়ে পুলিশ ডেকে আনুন। একদম দেরি করবেন না, যান।" "আমরা ততক্ষণ এই লোকটাকে পাহারা দিই।" ভদ্রলোক বললেন, "ঠিক বলেছ। আমি এখনই গিয়ে পুলিশ নিয়ে আসছি। তোমরা একটু অপেক্ষা করো।" এই বলে ভদ্রলোক চলে গেলেন। দূর থেকে পঞ্চুুর ডাক তখনও কানে আসছে। এই বাড়ির পিছন দিকেই একটা পুকুর আছে। সেই পুকুরের পাড় থেকে পঞ্চুর গলার স্বর ভেসে আসছে। বাবলু বলল, "আমার মনে হয় কঙ্কালের পোশাক-পরা সেই লোকটা পালাতে না পেরে জলে ঝাপ দিয়েছে। আর পঞ্চুও ছাড়বার পাত্র নয়। বোধ হয় উঠতে দিচ্ছে না ব্যাটাকে।" খানিক পরেই বাগানের বাইরে একটা গাড়ি থামার শব্দ পাওয়া গেল। ভোম্বল বারান্দার কাছে এগিয়ে গিয়ে টর্চের আলো ফেলে দেখল সত্যিই পুলিশের গাড়ি সেটা। গাড়ি থেকে নেমে কয়েকজন পুলিশ বাগানে ঢুকতেই ভোম্বল ওপর থেকে হেঁকে বলল, "আমরা সবাই এখানে আছি। আপনারা সোজা ওপরে উঠে আসুন।" পুলিশের লোকেরা দ্রুত ওপরে উঠে এল। ওদের সঙ্গে ছিলেন সেই ভদ্রলোক এবং থানার ওসি। ভদ্রলোক বললেন, "এই যে, এই সেই ছেলেরা। যারা আমার জীবন রক্ষা করেছে।" ওসি বাবলুর কাঁধে হাত রেখে বললেন, "তোমাদের পরিচয় ?" "আমরা পাণ্ডব গোয়েন্দা।" "আজকের দিনে তোমাদের মতন ছেলেমেয়ে দেখা যায় না। তা পাণ্ডব গোয়েন্দার মানে তো কিছু বুঝলাম না ভাই। এত রাত্রে তোমরা এখানে কী করতে এসেছিলে ?" বাবলু তখন একে একে সব কথা খুলে বলল। সব শুনে ওসি অত্যন্ত খুশি হয়ে বললেন, "এই যে ভদ্রলোকের জীবন রক্ষা করলে তোমরা, ইনি কে জান? ইনি একজন অধ্যাপক। তোমরা হয়তো নামও শুনে থাকবে।" বাবলু বলল, "কী নাম?" "এর নাম ভবেশ রায়।" বাবলু বলল, "হ্যাঁ হ্যাঁ শুনেছি।" এমন সময় ওসি-র চোখ পড়ল সেই কঙ্কালের পোশাক-পরা লোকটির দিকে। লোকটিকে দেখেই চমকে উঠলেন তিনি, "আরে, এ ব্যাটা তো একজন দাগী আসামী। আমি অনেকদিন ধরে খুঁজছিলাম ব্যাটাকে। বেশ কয়েকটা মার্ডার কেশ ঝোলানো আছে ব্যাটার নামে।" বাবলু বলল, "আরও একজন আছে স্যার।" "কোথায় ?" "সে গিয়ে পুকুরে ঝাপ দিয়েছে। আমাদের কুকুর পাহারা দিচ্ছে তাকে। ওই শুনুন আমাদের কুকুরের ডাক৷ " পঞ্চু তখনও সমানে চেঁচিয়ে চলেছে। ওসি তার কয়েকজন কনস্টেবলকে বললেন, "এই, তোরা এ ব্যাটাকে অ্যারেস্ট করে ভ্যানে ওঠা। আমি ততক্ষণে অন্যটার ব্যবস্থা করি।" এই বলে আরও দু-চারজন কনস্টেবলকে নিয়ে পুকুরের দিকে চললেন। পাণ্ডব গোয়েন্দারাও পুলিশের সঙ্গে চলল। জোড়া জোড়া টর্চের আলোয় আলোকিত পথে দলবদ্ধ হয়ে চলতে কোনও অসুবিধেই হল না। পুকুর পাড়ে গিয়ে সবাই যা দেখল তা এক মহা কেলেংকারির ব্যাপার। পলাতক লোকটি প্রাণ বাঁচাবার জন্য সত্যই জলে ঝাঁপ দিয়েছে। আর পঞ্চু তাকে এমন ফ্যাসাদে ফেলেছে যে বাছাধন কোনওরকমেই ডাঙায় উঠতে পারছে না। যেদিক দিয়ে উঠতে যায় সেদিক দিয়েই আক্রমণ করে পঞ্চু। নিরুপায় লোকটি তখন পঞ্চুর আঁচড়-কামড় থেকে বাঁচবার জন্যে জলের ওপর রসগোল্লার মতো ভাসছে। বাবলু গিয়ে পঞ্চুকে ধরতেই জল থেকে সুড় সুড় করে উঠে এল লোকটি। পুলিশের লোকেরা হাতকড়া নিয়ে একেবারে তৈরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। উঠে আসতেই অ্যারেস্ট করল লোকটিকে। পাণ্ডব গোয়েন্দাদের এই নৈশ অভিযান সত্যই সফল হল। দু- দু'জন নামকরা দুষ্কৃতীকে যে ওরা ধরিয়ে দিতে সক্ষম হল এটা বড় কম কৃতিত্বের ব্যাপার নয়। তা ছাড়া একজনের জীবনও রক্ষা হল। ওসি সেই রাতে পুলিশের জিপে করেই পাণ্ডব গোয়েন্দাদের প্রত্যেককে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিলেন। এবং সকলের বাবা-মাকে ধন্যবাদ জানালেন। আর সেই ভদ্রলোক অর্থাৎ ভবেশবাবু তার মেয়ের বিয়েতে পাণ্ডব গোয়েন্দাদের নেমন্তন্ন তো করলেনই উপরন্তু করলেন কী তার পরদিন রাত্রিবেলা পাণ্ডব গোয়েন্দাদের প্রত্যেকের বাবা-মাকে পর্যন্ত বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দারুণভাবে খাওয়ালেন। সে নিমন্ত্রণে অবশ্য পঞ্চুও বাদ পড়েনি। সেই থেকে পাণ্ডব গোয়েন্দাদের নাম সকলের মুখে মুখে ছড়িয়ে পরল। (সমাপ্ত) ---------


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৫৪ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now